হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে বোরো ধান সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। পানিতে ডুবে যাওয়ার আগেই ক্ষেতের শতভাগ ধান তারা ঘরে তুলতে চান।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) পর্যন্ত হাওরে ৪৩ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। বাকী ধান কাটতে কৃষকরা অতিরিক্ত শ্রমিক ও কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন নিয়ে মাঠে কাজ করছেন।
এ তথ্য জানিয়েছে হবিগঞ্জ কৃষিবিভাগ। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হাওড়ে ৯৬ শতাংশ ধান কাটা হবে বলে আশা করছেন তারা। পুরোপুরি ধান সংগ্রহ করতে ২ মে পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে বন্যার আভাস না থাকলেও দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের।
জানা গেছে, হাওরে বোরো ধানই হলো কৃষকদের মূল সম্পদ। সেখানে বছরে ৬ থেকে ৭ মাস পানি থৈ থৈ করে। তাই এই মৌসুমে বোরো ধানের ব্যাপক চাষাবাদ করেন কৃষকরা। ফসলটির উপর নির্ভর করে কৃষকদের পুরো বছরের চলার পথ তৈরি হয়। কিন্তু এ মৌসুমের ঝড়বৃষ্টি বোরো ধানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এসময়ে পানিতে ডুবে যাওয়ার আগেই ধান সংগ্রহ করতে হয়।
এখন পর্যন্ত বড় কোনো ধরনের বৃষ্টিপাত হয়নি, তবে সম্ভাবনা আছে। আকাশে মেঘ রয়েছে। এরইমধ্যে জেলার অনেক স্থানে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছু নিচু জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলার বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট হাওরের কৃষক সবুজ মিয়া, কালা মিয়া, সজল মিয়া, আছকির মিয়া, কাজল মিয়া, হাছন মিয়া জানালেন, তারা এখন পুরোদমে ধান সংগ্রহে ব্যস্ত। শ্রমিক সঙ্কট থাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। এ মেশিনে এক দিনেই প্রায় পাঁচ একর জমির ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়।
জেলার নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, মাধবপুর, লাখাই, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হাওর এলাকায় শত শত কৃষক শ্রমিক সঙ্কটে পড়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের সহায়তা নিয়েছেন। তবে নিচু জমিতে এ মেশিনে ধান কাটা কঠিন। তাই শ্রমিকদের মাধ্যমেই নিচু জমি থেকে ধান কাটা অব্যাহত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, হবিগঞ্জে বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। তবে হতেও পারে। জেলার ৯টি উপজেলার কৃষকদের ৮০ শতাংশ পাকা ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়। আশা করছি, কৃষকদের কষ্টে অর্জিত ফসল ভালভাবেই সংগ্রহ হবে। আমরা কৃষকদের পাশে আছি। মাঠে গিয়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন হস্তান্তর করেছি। ধান কাটা উৎসব হয়েছে। এতে আমি উপস্থিত হয়ে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করেছি।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আশেক পারভেজ বলেন, জেলায় এ মৌসুমে প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৩২ মেট্রিক টন। ৮ এপ্রিল থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আশা করছি, হাওরে মে মাসের ২ তারিখের মধ্যে ১০০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে যাবে। আর হাওর ছাড়া বাকী জমির ধান সংগ্রহে পুরো মে মাস লাগবে।
তবে ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।